১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইনের অধীন প্রণীত প্রজাস্বত্ত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ এর বিধান অনুসরণ ভূমি রেকর্ড ও জরিপের কাজসমূহ স্তরভিত্তিক সম্পাদিত হয়ে থাকে। রেকর্ড প্রণয়ন ও নকশা প্রস্ত্তত কাজে নিয়োজিত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীর সাথে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প অফিসে অথবা উপজেলায় অবস্থিত সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়ে সরাসরি যোগাযোগ করে ভূমি মালিকগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা গ্রহণ করতে পারেন। নিম্নবর্ণীত কর্মকর্তা/কর্মচারী জরিপের স্তরসমূহে যথা নিয়মে সেবা প্রদানে নিয়োজিত রয়েছে।
স্তরের নাম | সেবার ধরন,বিবরণ ও ভূমি মালিকের করণীয় | সেবা প্রদানে নিয়োজিত কর্মকর্তা /কর্মচারী | |
বিজ্ঞপ্তি প্রচার ( প্রজাস্বত্ত্ব, আইনের ১৪৪(১) ও ৯৯(১) বিধি | জরিপ শুরু করার পূর্বে সেটেলমেন্ট অফিসার স্থানীয় প্রশাসনসহ ভূমি মালিকগণকে অবহিত করে জরিপ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন। এ কাজে মাইকিং ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপনসহ ব্যাপক জনসংযোগ করা হয়। জরিপ বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার পর পরই ভূমি মালিকগণকে জরিপের প্রস্ত্ততিমূলক কাজ হিসাবে নিজ নিজ জমির আইল/সীমানা সঠিক ভাবে চিহ্নত করে রাখতে হবে। | জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার/ সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার | |
ট্রাভার্স | কোন মৌজার নকশা সম্পূর্ণ নতুন করে প্রস্ত্তত করতে সরেজমিনের সাথে সঙ্গতি রেখে একটি নির্দিষ্ট স্কেলে প্রাথমিক ভাবে নকশা প্রস্ত্ততের যে কাঠামো স্থাপন করা হয় সেটাই ট্রাভার্স। ট্রাভার্সের উপর ভিত্তি করে পি ৭০ সীটের মাধ্যমে মৌজার নকশা প্রস্ত্তত করা হয়। কোন মৌজার পুরোনো নকশা অর্থাৎ ব্লু-পিন্ট সীটের উপর জরিপ করার ক্ষেত্রে ট্রাভার্স করা হয় না। এ স্তরে জরিপ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে ভূমি মালিকগণকে যোগাযোগের তেমন প্রয়োজন নাই। তবে ভূমি মালিকগণ জমির আইল/সীমানা চিহ্নত করে রাখবেন। | ট্রাভার্স ক্যাম্প কর্মকর্তা / ট্রাভার্স সার্ভেয়ার। | |
কিস্তোয়ার | এই স্তরে সার্ভেয়ার/আমিনদল ভূমি মালিকগণ কর্তৃক চিহ্নত আইল/সীমানা অনুযায়ী প্রতি খন্ড জমি পরিমাপ করে মৌজার নকশা অংকন কিস্তোয়ার অথবা ব্লু-প্রিন্টে পুরোনো সংশোধন করেন। অনেকের ধারণা যে জরিপ কর্মচারীগণ জমির সীমানা ঠিক করে দেন। এ ধারণাটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে জরিপ কর্মচারীগণ বিদ্যমান সীমানা অনুযায়ী নকশা প্রস্ত্তত করেন। | সার্ভেয়ার/ সরদার আমীন/ হল্কা অফিসার/উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (কানুনগো) ক্যাডাস্ট্রাল সার্কেল অফিসার | |
খানাপুরী (প্রজাস্বত্ত্ব বিধি মালার ২৪ বিধি) | কিস্তোয়ার স্তরে আঙ্কিত নকশার প্রত্যেকটি দাগে সরেজমিন উপস্থিত হয়ে সার্ভেয়ার আমিনদল জমির দাগ নম্বর দিবেন এবং মালিকের রেকর্ড,দলিল পত্র ও দখল যাঁচাই করে প্রাথমিকভাবে মালিকের নাম,ঠিকানা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য খতিয়ানে লিপিবদ্ধ (খানাপুরী) করেন। এ স্তরে ভূমি মালিকদের প্রধান কাজ হচ্ছে যথাসময়ে নিজে জমিতে উপস্থিত হয়ে সার্ভেয়ার আমিনকে জমির মালিকানা ও দখল সংক্রান্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন করে খতিয়ানে ঐসব তথ্য লিপিবদ্ধ করানো। | সার্ভেয়ার/ সরদার আমিন/ হল্কা অফিসার | |
বুঝারত (প্রজাস্বত্ত্ব বিধি মালার ২৬ বিধি) | বুঝারত অর্থ জমি বুঝিয়ে দেওয়া। এ স্তরে নতুন সার্ভেয়ার আমিনদল কর্তৃক খতিয়ান বা পর্চায় জমির পরিমাণ উল্লেখ করে বিনামূল্যে উক্ত পর্চা জমির মালিককে সরবরাহ (বুঝারত) করা হয়, যা ‘‘মাঠ পর্চা’’ নামে পরিচিত। পর্চা বিতরনের তারিখটি পূর্বেই নোটিশ/পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার/এলাকায় মাইকিং এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। পর্চা বিতরনের নির্ধারিত তারিখে ভূমি মালিকগণ নিজে উপস্থিত থেকে জরিপ কর্মচারীগণের নিকট থেকে পর্চা সংগ্রহ করবেন। ভূমি মালিকগণ পর্চার সঠিকতা যাঁচাই করে দেখবেন এবং প্রাপ্ত পর্চার ভূল-ভ্রান্তি সংশোধন বা পরিবর্তন আবর্শক হলে নির্দিষ্ঠ বিবাদ (Dispute) ফরম পূরণ করে তা সার্ভেয়ার/আমিনের নিকট জমা দিবেন। হল্কা অফিসার সংশ্লিষ্ট পক্ষ গণের শুনানীর মাধ্যমে দ্রুত ঐ সকল বিবাদ নিষ্পত্তি করবেন। খানাপুরী স্তরে কোন কারণে মালিকের নাম,ঠিকানা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য খতিয়ানে রেকর্ড ভূক্ত হয়নি এমন ভূমি মালিকগণ বুঝারত স্তরে হল্কা অফিসারের নিকট আবেদনক্রমে ঐ সকল তথ্য রেকর্ড করাবার সুযোগ পাবেন। ভূমি মালিকগণকে মনে রাখতে হবে মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন রেকর্ড করার এটাই শেষ সুযোগ। এর পরেও রেকর্ড সংশোধন/প্রণয়নের সুযোগ থাকলেও তা হবে অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী কোন ক্যাম্প অফিসে, যা জটিল ও যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ। | সার্ভেয়ার/ সরদার আমিন/উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার( কানুনগো) / সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার/ক্যাডাস্ট্রাল সার্কেল অফিসার। | |
খানাপুরী কাম বুঝারত | যখন কোন মৌজার ব্লু-প্রিন্ট সীটের জরিপ কাজ করা হয় তখন খানাপুরী ও বুঝারত স্তরের কাজ এক সাথে করা হয়। |
| |
তসদিক বা এ্যাটেষ্টেশন (প্রজাস্বত্ত্ব বিধি মালার ২৮ বিধি) | ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে তসদিক স্তরের কাজ সম্পাদিত হয়। ক্যাম্প অফিসে তসদিক স্তরের কাজ সম্পাদন করেন এক জন উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার(কানুনগো) বা রাজস্ব অফিসার। বুঝারত স্তরের মালিকানা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র ও প্রমাণাদি যাচাই করে প্রতিটি খতিয়ান সত্যায়ন করেন তসদিক অফিসার। এ স্তরে ভূমি মালিকগণ পূর্ববর্তী স্তরে প্রণীত পর্চা ও নকশায় কোন সংশোধন প্রয়োজন মনে করলে বিাবদ (Dispute) দাখিল করতে পারেন এবং উপযুক্ত প্রমান উপস্থাপন করে তা সংশোধনের সুযোগ নিতে পারেন। তসদিকৃত পর্চা জমির মালিকানার প্রাথমিক আইনগত ভিত্তি (Legal Document) হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই এ স্তরের কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। | তসদিক অফিসার/ উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (কানুনগো) | |
খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) (প্রজাস্বত্ত্ব বিধি মালার ২৯ বিধি) ও আপত্তি দায়ের | তসদিক সমাপ্তির পর কোন এলাকার জমির প্রর্ণীত রেকর্ড{ খসড়া প্রকাশনা (ডিপি)} সর্বসাধারনের প্রদর্শনের জন্য মৌজা ভিত্তিক ৩৫দিন উন্মুক্ত রাখা হয়। খসড়া প্রকাশনা উন্মুক্ত রাখা সময়কাল উল্লেখপূর্বক ক্যাম্প অফিস হতে এজন্য বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করা হয়। ভূমি মালিকগণের নামের আদ্যোক্ষর অনুযায়ী খতিয়ান বা পর্চা ক্রমবিন্যাস করা হয় বিধায় তসদিকৃত খতিয়ানটির নম্বর পরবর্তীতে বদলে যায়। তাই তসদিকৃত খতিয়ানের নতুন নম্বর অর্থাৎ ডিপি নম্বরটি সংগ্রহের জন্যও ভূমি মালিকগণকে নিজ নিজ পর্চাসহ খসড়া প্রকাশনা (ডিপি) ক্যাম্পে উপস্থিত হতে হয়। ডিপিতে প্রকাশিত খতিয়ান সর্ম্পকে কারো কোন আপত্তি বা দাবী থাকলে সরকার নির্ধারিত ১০ টাকার কোর্ট ফি দিয়ে আপত্তি দায়ের করা যাবে।এটিই ৩০ বিধির আপত্তি। |
| |
আপত্তি শুনানী (প্রজাস্বত্ত্ব বিধি মালার ৩০ বিধি) | ডিপি চলাকালে গৃহিত আপত্তি মামলা সমূহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে নোটিশ ইস্যু মারফত জ্ঞাত করে নির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও স্থানে শুনানী গ্রহণ করে নিষ্পত্তি করা হয়। দেওয়ানী কার্যবিধি অনুসরণে এটি একটি বিচারিক কার্যক্রম। পক্ষগণ নিজে অথবা প্রয়োজনে মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজ নিজ দাবী আপত্তি অফিসারের নিকট উপস্থাপন করতে পারেন।আপত্তি অফিসার পক্ষগণকে বিস্তারিত শুনানী দিয়ে কেস নথিতে লিপিবদ্ধ ও পর্যালোচনা করে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন এবং আইনানুযায়ী প্রস্ত্ততকৃত রেকর্ডে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনবেন। সন্তোষজনক কারণ উল্লেখ না করে কোন একটি পক্ষের অনুপস্থিতিতে আপত্তি মামলা নিষ্পত্তি করার কোন বিধান নেই। |
| |
আপীল শুনানী (প্রজাস্বত্ত্ব বিধি মালার ৩১ বিধি) | আপত্তি রায়ে সংক্ষুদ্ধ কোন পক্ষ ৩১বিধিতে আপিল দায়ের করলে এ পর্যায়ে ঐ সকল আপীলের শুনানীও নিষ্পত্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আপত্তি মামলার রায়ের নকল সেটেলমেন্ট অফিসার বরাবর আবেদন দাখিলের মাধ্যমে সর্বাগ্রে উত্তোলন করতে হবে। এ জন্য সরকার নির্ধারিত নিম্নরূপহারে কোট ফি এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফলিও/কার্টিজ পেপার জমা দিতে হবে। | সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার/চার্জ অফিসার/ জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার | |
বিষয় | কোর্ট ফি | ||
ক) আবেদন পত্র | ১০.০০ টাকা | ||
খ) নকল (শব্দ) * ১ হতে ৩৬০ * ৩৬১ হতে ৭২০ * ৭২১ হতে ১০৮১ * ১০৮২ হতে ১৪৪০ * ১৪৪১ হতে১৮০০ * ১৮০১ হতে ২১৬০ * ২১৬১ হতে ২৫২০ * ২৫২১ হতে ২৮৮০ | ২.৫০ টাকা ৫.০০ টাকা ৭.৫০ টাকা ১০.০০ টাকা ১২.৫০ টাকা ১৫.০০ টাকা ১৭.৫০ টাকা ২০.০০টাকা | ||
আপত্তির রায় প্রদানের তারিখ থেকে (আপত্তির নকল সরবরাহের সময় বাদ দিয়ে) ৩০ দিনের মধ্যে আপীল দায়ের না করলে আবেদনটি তামাদির কারণে অগ্রহণযোগ্য হবে। আপীল একটি বিচারিক কার্যক্রম এবং আপীল ঘোষিত রায়ই চূড়ান্ত। আপীল স্তরের পরে প্রণীত রেকর্ড বিষয়ে কেবল মাত্র তঞ্চকতা ও করণিক ভূলের অভিযোগে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের নিকট প্রজাস্বত্ত্ব বিধিমালার ৪২(ক) ও ৪২(খ) বিধি মোতাবেক প্রতিকার চাওয়া যায়। | |||
চূড়ান্ত প্রকাশনা(প্রজাস্বত্ত্ব বিধি মালার ৩৩ বিধি) | উপরোক্ত স্তর সমূহের কাজ সমাপ্তির পর আনুষাঙ্গিক কার্যাদি সম্পন্ন করে পর্চা ও নকশা মুদ্রণ করা হয়। মুদ্রিত নকশা ও পর্চা পুনঃপরীক্ষা করে তা চূড়ান্ত প্রকাশনায় দেওয়া হয়। চূড়ান্ত প্রকাশনার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলায় একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। চূড়ান্ত প্রকাশনার সময় কাল ৩০ কর্মদিবস। এ স্তরে ভূমি মালিকগণ মুদ্রিত নকশা ও পর্চা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করতে পারেন। প্রতিটি পর্চা ৬০.০০ টাকা এবং প্রতিটি নকশা ৩৫০.০০ টাকা। কোন মৌজার চূড়ান্ত প্রকাশনা কোন কার্যালয়ে কবে থেকে আরম্ভ হবে সে সর্ম্পকে নোটিশ/পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। | উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস | |
ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও আপীলেট ট্রাইব্যুনাল | মৌজা রেকর্ড চূড়ান্ত প্রকাশনা সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক বছরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রকাশিত রেকর্ডের বিষয়ে কোন আপত্তি থাকলে সে সর্ম্পকে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল/ দেওয়ানী আদালতে প্রতিকার প্রার্থনা করা যাবে। ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইব্যুনালে কেহ প্রতিকার না পেলে তিনি হাইকোর্টে ল্যান্ডসার্ভে আপীলেট ট্রাইব্যুনালেও আপীল করতে পারেন। |
| |
মৌজা সীমানা নিয়ে বিরোধ | জরিপ চলাকালে কোন মৌজা/উপজেলা সীমানা সম্পর্কীয় বিষয়ে কোন বিরোধ দেখাদিলে সেটেলমেন্ট অফিসার খানাপুরী কাম-বুঝারত স্তরে উক্ত বিরোধ বিধিমতে নিষ্পত্তি করবেন। আন্তঃজেলা সীমানা বিরোধ মহাপরিচালক ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক গনের সমন্বয়ে নিষ্পত্তি করবেন। |
|